পর্দা হীনতার বিপদ

পর্দাহীনতার বিপদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফারমানি, অভিশাপ, জাহান্নামিদের কাজ, ইবলিসের সুন্নত, ইহুদী নীতি, জাহেলি রীতি ও চারিত্রিক পদস্খলনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। বেপর্দার কারণে নারী সস্তা সামগ্রীতে রূপান্তরিত হয় এবং সমাজে নানা রোগ ও অনাচারের প্রসার ঘটে।

❑ পর্দা হীনতার বিপদ:

◈ পর্দা হীনতা আল্লাহ-রাসূলের নাফারমানি:

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করবে সে তো নিজেরই ক্ষতি করবে। আল্লাহর কোনই ক্ষতি হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে সে লোক নয় যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করে। তাঁরা প্রশ্ন করলেন, কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর যে আমার নাফারমানী করবে সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে।” (বুখারী)

◈ পর্দা হীনতা অভিশাপ:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “শেষ যুগে অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু নারী হবে, যারা কাপড় পরেও উলঙ্গ থাকবে। তাদের মাথা হবে উটের চুড়ার ন্যায়। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ কর। কেননা তারা অভিশপ্ত।”

◈ বেপর্দা হওয়া জাহান্নামিদের কাজ:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জাহান্নাম বাসী দুটি দল রয়েছে। যাদেরকে আমি এখনও দেখিনি। একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকে।” (মুসলিম)

◈ বেপর্দা ইবলিশের সুন্নত:

আদমের সাথে ইবলিশের ঘটনাই আমাদের সামনে ইবলিসের ষড়যন্ত্র উন্মোচন করে দেয়; সে কিরূপ আগ্রহী ছিল লজ্জা স্থান প্রকাশ হওয়া ও পর্দা উন্মোচন করার জন্য। বেপর্দা হচ্ছে শয়তানের মূল লক্ষ্য। আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারে; যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে তাদের থেকে তাদের পোশাক খুলিয়ে দিয়েছে। যাতে করে তাদের লজ্জাসস্থান প্রকাশ হয়ে পড়ে।(সূরা আরাফ- ২৭) সুতরাং ইবলিসই হল, বেপর্দা ও লজ্জাহীনতার আহ্বানকারী। আর সেই হল আধুনিক নারী মুক্তি নামে আন্দোলনের সবচেয়ে বড় নেতা।

◈ বেপর্দা ইহুদী নীতি:

মুসলিম জাতির নৈতিকতা ধ্বংসের ব্যাপারে ইহুদীদের ষড়যন্ত্র কারো কাছে গোপন নয়। বিশেষ করে নারীর ফিতনার মাধ্যমে। কেননা নারীর সাথে পুরুষের অবাধ মেলামেশা জাতির নৈতিকতা ধ্বংসের প্রধান অস্ত্র। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা দুনিয়া এবং নারী থেকে বেঁচে থাক। কেননা বনী ইসরাইলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফিতনা ঘটেছিল নারী দ্বারা।” (মুসলিম)

বেপর্দা ঘৃণিত জাহেলি রীতি: আল্লাহ বলেন, “তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” [সূরা আহযাব: ৩৩] এ আয়াতে বেপর্দাকে অন্ধকার যুগের বর্বরদের রীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহেলি যুগের সবধরনের রীতি-নীতিকে পদদলিত করেছেন। তিনি বলেন, “মূর্খ যুগের সব বিষয় আমার দু পায়ের নীচে।” (বুখারী)

◈ বেপর্দা চারিত্রিক পদস্খলনের অন্যতম মাধ্যম:

কেননা এর মাধ্যমে নারী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলে তাদের চরিত্র ধ্বংস হয়। বিশেষ করে যুব সমাজ। কেননা বেপর্দা তাদের ন্ত অন্তরে কুচিন্তার উদ্রেক করে; ফলে তারা ধাবিত হয় অশ্লীলতার দিকে। বেপর্দার কারণে নারী হয় সস্তা সামগ্রী। যার বাস্তব প্রমাণ হল বর্তমান প্রচার মাধ্যম। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য-সামগ্রী বাজারজাত করার ক্ষেত্রে নারীকেই ব্যবহার করে থাকে।

বেপর্দার কারণেই বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নানা ধরণের দুরারোগ্য ব্যাধির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: এইডস্‌…। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কোন জাতির মধ্যে যখনই অশ্লীলতার প্রকাশ ঘটবে, তখনই তাদের মধ্যে মহামারী, দুর্ভিক্ষ.. প্রভৃতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে; যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না।” (ইবনে মাজাহ)

◈ বেপর্দা চোখের ব্যভিচারের পথকে সুগম করে:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “চোখের ব্যভিচার হচ্ছে দৃষ্টিপাত করা।” নি:সন্দেহে দৃষ্টি অবনত রাখার আনুগত্যকে লঙ্ঘন করার কারণেই পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদের সূত্রপাত হয়েছে; যা আনবিক বোমা ও ভূমিকম্পের চাইতে বেশী ক্ষতি করে থাকে মানুষের চরিত্রকে। আল্লাহ বলেন, “যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থা সম্পন্ন লোকদেরকে উদ্বুদ্ধ করি, অত:পর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। ফলে তাদের উপর দণ্ড ন্যায়ত: অবধারিত হয়ে পড়ে এবং তখন আমি তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে থাকি।” [সূরা বানী ইসরাঈল: ১৬]

◯ শরিয়ত সম্মত পর্দার জন্য আবশ্যিক শর্ত সমূহ:

১) নারী তার সমস্ত শরীর ঢেকে দেবে।
২) পর্দার পোশাকটি যেন নিজেই সৌন্দর্য না হয়।
৩) পর্দার কাপড় মোটা হবে পাতলা নয়।
৪) প্রশস্ত ঢিলা-ঢালা হবে; সংকীর্ণ হবে না।
৫) আতর সুবাস মিশ্রিত হবে না।
৬) কাফের নারীদের পোশাকের সাথে সদৃশ পূর্ণ হবে না।
৭) পুরুষের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না।
৮) উক্ত পোশাক যেন মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্যে না হয়।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts

ইসলামে পর্দার গুরুত্ব
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর পর্দা
editor

 

ইসলামে পর্দার গুরুত্ব ❑ ভূমিকা: ◈ পর্দা : ‘পর্দা’ শব্দটি মূলত ফারসি। যার আরবি প্রতিশব্দ ‘হিজাব’। পর্দা বা হিজাবের বাংলা অর্থ ঢেকে রাখা, আবরণ, আড়াল, অন্তরায়, আচ্ছাদন, বস্ত্রাদি দ্বারা সৌন্দর্য

Read More
সুন্নতি পোশাক
Sunnah Fashion Ltd.

নও মুসলিম নারীর দৃষ্টিতে হিজাব

খাওলা নাম্নী একজন জাপানী নারী, যিনি ফ্রান্সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি পর্দার গুরুত্ব, এর মাধ্যমে অর্জিত ব্যক্তিগত শোভা ও সম্মান, এবং মুক্ত পোশাকের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলির ওপর আলোচনা করেন। তাঁর বক্তব্যে

Read More
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর পর্দা
Sunnah Fashion Ltd.

হিজাব: মহান আল্লাহর নির্দেশ

ইসলামি শরীয়তে নারীর মর্যাদা ও পোশাকের গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়েছে, পর্দার আদেশ নারীর ইজ্জত, পবিত্রতা ও সৌন্দর্য রক্ষার জন্য। হিজাব নারীর আত্মসম্ভ্রম এবং পুরুষের জন্যও সম্মানের। কোরান ও হাদিসের

Read More